২০২৪ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এর ৭ অধিনায়ক যারা


ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য বছরের সবচেয়ে বড় উৎসবের একটি হল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। প্রতি বছরের মতো এবারও বিপিএলের আসর শুরু হয়েছে গত ১৯এবং ১ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই আসর।

৯ জানুয়ারিবিপিএলের এবারের আসরে অংশ নিয়েছে  মোট সাতটি দল। প্রতিটি দলের নেতৃত্বে থাকছেন একজন অভিজ্ঞ ও প্রতিভাবান অধিনায়ক। এই অধিনায়কদের নেতৃত্বেই প্রতিটি দল তাদের নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্য লড়াই করবে।

জাতীয় নির্বাচনের জন্য এবারের বিপিএল ২০২৪ আসরের আয়োজন এত বেশি জাকজমকপূর্ণ করতে পারেনি বিপিএল কর্তৃপক্ষ। টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র একদিন আগে বিপিএল দশম আসরের ট্রফি উন্মোচন এবং দলের অধিনায়কদের নাম প্রকাশ করা হয়। 

বিপিএল ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনে উপস্থিত ছিলেন টুর্নামেন্টের সাত দলের প্রতিনিধি। আয়োজন মূলত অধিনায়কদের নিয়ে। তবে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে মোহাম্মদ মিঠুনকে চমকে যান অনেকেই। পরে অবশ্য জানা যায়, মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে দলের প্রতিনিধি ছিলেন মিঠুন। অধিনায়ক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মাশরাফির নাম সিলেট জানায় অবশ্য আরও অনেক পরে। 

মাশরাফিকে নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত গতবার চমক দেখানো দলটির নেতৃত্বে আবারও দেখা গেলো বিপিএলের সফলতম অধিনায়ককেই। তার মতোই অনিশ্চয়তার নানা পথ পেরিয়ে ফরচুন বরিশালের হয়ে দেখা যায় তামিম ইকবালকে।  

এছাড়া বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস, খুলনা টাইগার্সের এনামুল হক, রংপুর রাইডার্সে নুরুল হাসান সোহান, দুর্দান্ত ঢাকার মোসাদ্দেক হোসেন ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়কত্ব করবেন শুভাগত হোম। লিটন ও এনামুল বিপিএলে নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে থাকছেন এই প্রথমবার। 

ক্রিকেক্স নিউজ এর আজকের আলোচনায় বিপিএল ২০২৪ এর সেরা অধিনায়কদের সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।  

মাশরাফি বিন মুর্তজা- (সিলেট স্ট্রাইকার্স)

টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ককে তার দল আরেকবার অধিনায়কত্ব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজা  তার পায়ের পুরোনো চোটের কারণে এবং জাতীয় নির্বাচনের কারণে বিপিএলের আগে পুনর্বাসনে সময় দিতে না পারার কারণে নেতৃত্ব নিতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বোলিং করার মতো অবস্থায়ও ছিলেন না। ফলে শুরুর বেশ কিছু ম্যাচ খেলতেও চাননি।

সিলেট স্ট্রাইকার্সের সত্ত্বাধিকারীরা মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বগুণের ওপর ভরসা রাখেন। তারা তাকে যে কোনো অবস্থায়ই দলে চান, এমনকি যদি তিনি বোলিং নাও করতে পারেন। মাশরাফি শেষ পর্যন্ত তাদের চাওয়া মেনে নেন।

তবে মাশরাফির শারীরিক অবস্থা এখনও ভালো নয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আঘাতের কারণে ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন। শুরুর কয়েক ম্যাচে তিনি বোলিং করতে পারবেন না বলেই মনে হয়েছিল । ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়েও তিনি কতটা পারফর্ম করতে পারবেন, তা দেখার বিষয়। যদিও প্রথম কিছু ম্যাচে ভালো মাশরাফি বোলিং করেন।

এবারের আসরে তার ডেপুটি হিসেবে থাকবেন মিঠুন। অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্তর সম্ভাবনাও ছিল। তবে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান হিসেবে তাকে নির্ভার হয়ে খেলতে দিতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। 

তামিম ইকবাল- (ফরচুন বরিশাল)

তামিম ইকবাল চার বছর পর আবারও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) অধিনায়কত্ব করবেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তিনি সর্বশেষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরের আসরে একই দলের হয়ে খেললেও তিনি ইমরুল কায়েসের হাতে দায়িত্ব তুলে দেন।

২০১৯ সালের বিপিএলে ঢাকা প্লাটুনে খেলার সময় তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজার অধীনে ছিলেন। ২০২২ সালে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকায় তামিম ইকবালের অধিনায়ক ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর ২০২৩ সালে খুলনা টাইগার্সে তামিম ইকবালের অনুরোধে ইয়াসির আলি চৌধুরি অধিনায়কত্ব করেন।

মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো তামিম ইকবালও প্রথমে অধিনায়কত্ব নিতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন যে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে অধিনায়ক করা হোক। তবে দলের ফরচুন বরিশাল চাইছিলেন যে তামিমই অধিনায়ক হোন। অবশেষে মালিকপক্ষের চাওয়া মেনে তামিম অধিনায়কত্ব নিতে রাজি হয়েছেন। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই তিনি ক্রিকেটে ফিরলেন চার মাস পর।

এনামুল হক বিজয়- (খুলনা টাইগার্স)

এনামুল হক বিজয় বিপিএলের প্রতিটি আসরেই খেলেছেন, তবে কখনও অধিনায়কত্ব করেননি। এবার খুলনার হয়ে অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন এই ৩১ বছর বয়সী উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।

আগের আসরের অধিনায়ক ইয়াসির আলী চৌধুরী ও অভিজ্ঞ তামিম ইকবালকে ছেড়ে দেওয়ার পর এনামুলের অধিনায়কত্ব করাটা অনেকটা অনুমেয় ছিল। নিলামের আগে সরাসরি চুক্তিতে খুলনা তাকে দলে নিয়েছিল।

গত বিপিএলে ফরচুন বরিশাল দলের হয়ে খেলেছিলেন এনামুল হক বিজয়। ১৩ ম্যাচে তিনি ২৮০ রান করেন, যার মধ্যে একটি ফিফটি ছিল। তার গড় ছিল ২৩.৩৩। বিপিএলে এখন পর্যন্ত তার মোট রান ২ হাজার ৮৮, যা তিনি ১০৭ ম্যাচে করেছেন। তার গড় ২২.২১ এবং স্ট্রাইক রেট ১১৭.৬৩। বিপিএলে অন্তত ২ হাজার রান করা ৬ ক্রিকেটারের মধ্যে তিনি একজন।

লিটন কুমার দাস- (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স গত কয়েক আসর ধরে লিটন দাসের নেতৃত্বে দলে ভালো পারফর্ম করছে। তাই এবারও তাকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ইমরুল কায়েস গত তিনবার দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। কিন্তু তার বয়স বেড়েছে এবং পারফরম্যান্সও কমেছে। তাই এবার তাকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইমরুল কায়েস কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে সফল ছিলেন, তবে তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দলের প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল। কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন মনে করেন যে ইমরুলের জায়গায় একজন অধিনায়ক থাকা উচিত যার পারফরম্যান্স একাদশে নিশ্চিত। দলের সত্ত্বাধিকারী নাফিসা কামাল এই পরিবর্তন সমর্থন করেছেন।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) লিটন দাস সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। এই দলের হয়ে ৫৫ ম্যাচে তিনি করেছেন ১ হাজার ৩৬ রান। এছাড়াও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, রাজশাহী রয়্যালস এবং সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেলে তিনি মোট ৮১ ম্যাচে ২২.৭৫ গড় এবং ১২৬.৯৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১ হাজার ৬৮৪ রান।

নুরুল হাসান সোহান- (রংপুর রাইডার্স)

রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক হিসেবে গত আসরেও নুরুল হাসান দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবারও তিনি সেই দায়িত্ব পেয়েছেন, যা কিছুটা চমকপ্রদ। কারণ, এই দলে রয়েছেন সাকিব আল হাসান, যিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।

সাকিব আল হাসান এবারের বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলছেন । দলটি তাকে সরাসরি চুক্তিতে দলে নিয়েছে। মালিকপক্ষের আশা ছিল, সাকিবকে অধিনায়ক করা হবে। কিন্তু সাকিব চাপ এড়াতে চান বলে অধিনায়কত্ব নিতে চাননি। তিনি চোখের সমস্যায়ও ভুগছেন, যা চাপের কারণে হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

গত বছরের বিপিএলে রংপুর রাইডার্স সোহানের নেতৃত্বে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। টুর্নামেন্টে অধিনায়ক সোহান ১০ ইনিংসে ২৮.২৮ গড়ে ১৯৮ রান করেছিলেন। পাশাপাশি উইকেটের পেছনে তিনি ১০টি ডিসমিসাল করেন, যা ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

শুভাগত হোম- (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স তাদের অধিনায়ক হিসেবে শুভাগত হোমকে পুনরায় নিয়োগ দিয়েছে। দলটিতে দেশি বা বিদেশি বড় তারকা নেই। গত আসরে চট্টগ্রাম সবার নিচে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছিল। তাই দলের ভাগ্য বদলের জন্য শুভাগতকেই নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। শুভাগত হোম জাতীয় লিগ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগসহ ঘরোয়া আসরগুলোতে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।

গত বিপিএলে চট্টগ্রামের হয়ে শুভাগত হোম ব্যাট ও বল উভয় বিভাগেই ভালো পারফর্ম করেছিলেন। ব্যাটিংয়ে তিনি ৯ ইনিংসে ২৮.৩৩ গড় ও ১৪৫.২৯ স্ট্রাইক রেটে ১৭০ রান করেন। বল হাতে তিনি ৯ উইকেট নেন।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত- (দুর্দান্ত ঢাকা)

দুর্দান্ত ঢাকার দলগত শক্তি অন্য দলগুলোর তুলনায় কম। এই দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মোসাদ্দেক। এই সিদ্ধান্তে খুব বেশি চমক নেই। স্কোয়াডে মোসাদ্দেক ছাড়া আরেকজন নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য ছিলেন তাসকিন আহমেদ। তবে চোটপ্রবণ এই ফাস্ট বোলারের ওপর বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চায়নি দল।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ঘরোয়া ক্রিকেটে একজন অভিজ্ঞ ও সফল অধিনায়ক। তিনি বিপিএল, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং জাতীয় ক্রিকেট লিগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ঢাকা লিগে তার নেতৃত্বে সবশেষ মৌসুমে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Facebook